নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. আবু সাঈদ রাশেদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী এক নারীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযোগ দিয়ে বিপাকে রয়েছেন বলেও জানান ওই নারী।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে উপজেলা চত্বরে বিচারপ্রার্থী ওই নারী বলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বনিবনা হচ্ছিল না। এজন্য আমি রাগ করে বাবার বাড়িতে থাকি। পরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য নোয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আবু সাঈদ রাশেদের কাছে যাই। তিনি মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। অভিযুক্ত মো.আবু সাঈদ রাসেদ জেলার সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
গত রোববার (৭ মে) দুপুরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন,
ভুক্তভোগী নারীর দাবি, মেম্বার তাকে রাত ১০টার পর একান্তে ১০ মিনিট সময় দিতে বলেছেন। তবেই তিনি ওই বিচার সঠিকভাবে করে দেবেন। পরে বিচারপ্রার্থী নারী বাড়ি চলে গেলে রাতে মেম্বার ফোন করে জানতে চান সবাই ঘুমিয়েছে কি না। ফোনে সদুত্তর না পেয়ে রাতে মেম্বার নারীর বাড়িতে যান। চিৎকার দেওয়ার ভয় দেখালে বাড়ি ছেড়ে চলে যান মেম্বার।
এদিকে, ওই নারী মেম্বারের শাস্তি চেয়ে নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেম্বার এখন তার ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এমনকী অভিযোগ তুলে নিতে ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন ওই নারী।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নোয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি দুই গ্রামে বিভক্ত। গত ইউপি নির্বাচনে ওয়ার্ডের পূর্ব চর উরিয়া থেকে ৬জন ইউপি সদস্য পদে প্রার্থী হন। অন্যদিকে মধ্যম চর উরিয়া থেকে কোন প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় একটি কুচক্র রাশেদকে প্রার্থী করিয়ে দেয়। ওই সুযোগে রাশেদ ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েই স্বামী-স্ত্রীকে প্রেমিক যুগল ভেবে জিম্মি করে ৫০ হাজার টাকা আদায়, গেল ঈদুল ফিতরের দিন চাঁদা না দেওয়া স্থানীয় এক ব্যক্তির মেয়ের জামাতাকে মারধর, স্বপন নামের এক ইটভাটার মাঝি থেকে শ্রমিক সরবরাহের জন্য টাকা নিয়ে লোপাট, হোরন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে তাঁকে প্রকাশ্যে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এরআগে ২০২০ সালের ৯ জুন ফেনীতে ১৬ কোটি টাকা মূল্যের সাপের বিষসহ র্যাব এর হাতে আটকের মামলার আসামি হন ইউপি সদস্য রাশেদ। তার অপকর্মে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। ইতিমধ্যে তার এসব অপকর্মের কারণে কয়েক দফায় স্থানীয় লোকজনের হামলার শিকারও হয়েছেন রাশেদ। জনপ্রতিনিধি নামের এই অপকর্মের হোতার হাত থেকে রক্ষা পেতে রাশেদকে ইউপি সদস্য থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মেম্বার মো. আবু সাঈদ রাশেদ বলেন, পারিবারিক বিষয় তাই একান্তে কথা বলতে বলেছি। এখন আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষরা বিষয়টি ভিন্নখাতে নিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন।
নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান পারভেজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান মাওলানা ইয়াসিন আরাফাত বর্তমানে পবিত্র ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তিনি থাকতে ভুক্তভোগী নারী লিখিত অভিযোগ করেন এবং ৭জন ইউপি সদস্যের সামনে মৌখিকভাবেও ঘটনার বর্ণনা দেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নারীর অভিযোগ পেয়ে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Posted ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
bbcjournal.com | rifat