ছবি: বিবিসি জার্নাল
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকা চৌমুহনী, জেলা সদরের মাইজদী, দত্তেরহাটসহ জেলার সেমাই কারখানাগুলোতে স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশ ও মানের বালাই ছাড়াই হরেক রকমের লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে এক শ্রেণীর মুনাফালোভী চক্র। এসব চক্র প্রশাসনের জরিমানা ও জনস্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করে জালিয়াতি করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। সচেতন মহলের মতে ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং।
লাচ্ছা সেমাই ভোক্তাদের চোখে যতটা রুচিশীল আর মুখরোচক, ঠিক ততটাই স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে ও নোংরা পরিবেশে তৈরী হওয়ায় রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। নোয়াখালী সদর ও বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে বিভিন্ন বেকারী ও অস্থায়ী কারখানাগুলোতে মানুষের মুখরোচক এই সেমাই তৈরি হচ্ছে চরম অযত্নে।
সরেজমিন চৌমুহনী সেতুভাঙ্গার খাজা লাচ্ছা সেমাই, হাজীপুরের আনন্দ লাচ্ছা সেমাই, চৌরাস্তা বিসিক এলাকার পপুলার লাচ্ছা সেমাই, চৌমুহনী বাজারে বর্ণফুল লাচ্ছা সেমাই, নোয়াখালী সদরের দত্তেরহাট রুচিকা লাচ্ছা সেমাই কারখানাসহ জেলার বেশ কয়েকটি সেমাই কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, নোংরা পরিবেশ, সব কিছু মিলে মিশে একাকার, স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে পা দিয়ে বানানো হয় খামির, তারপর শ্রমিকের ঘামযুক্ত শরীরে ডান ও বাম হাতের কসরতে সেমাই’র বল তৈরী করা হয়, এরপর গরুর চর্বি ও পামওয়েলের মিশ্রণে তথাকথিত ডালটায় চুুবিয়ে ভাজার জন্যে প্রস্তুত করা হয়।
মেশানো হয় কৃত্রিম রং। শুরু হয় পোড়া তৈলে সেমাই ভাজা, ভাজা শেষে ব্যস তৈরী চকচকে ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই। এমনো দেখা যায় এক সপ্তাহ পুরোনো তেলের সাথে নতুন তৈল মিশিয়ে সেমাই ভাজার কাজ চলে মাসের পর মাস। সর্বশেষ বাজারজাতকরণের জন্য প্রস্তুত করা হয় প্যাকেট। কোন কোন অখ্যাত কারখানায় তৈরী সেমাই ডুকানো হয় দেশের নামী-দামী ব্যান্ডের সেমাই প্যাকেটে।
আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চকচকে ঘিয়ে ভাজা এসব লাচ্ছা সেমাই ছড়িয়ে দেয়া হয় নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে। ঘামযুক্ত ও নোংরা পরিবেশে তৈরী এই লাচ্ছা সেমাই মুখোরচক হলেও স্বাস্থ্যঝুকি মারাক্তক।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক সেমাই তৈরীর এক শ্রমিক জানান, প্রতি বছরই ঈদকে সামনে রেখে এভাবে সেমাই তৈরী করে নোয়াখালীসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে পাইকারী বিক্রি করা হয়। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন আসেন। পরে মালিকের সাথে কথা বলে চলে যান।
জেলা শহরে ঈদের কেনাকাটা করতে মায়মুনা বেগম, জেসমিন আক্তারসহ একাধিক ক্রেতা বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন একটি রুচিশীল ও মুখরোচক খাবার হলো লাচ্ছা সেমাই। ঈদের দিন লাচ্ছা সেমাই না হলে মনে হয় ঈদের আনন্দটাইপুরন হয়না। কম বেশি সকলেই এই লাচ্ছা সেমাই ক্রয় করে। কিন্তু চকচকে ভাজা আর হরেক রকমের ব্যান্ডের প্যাকেটজাত এই লাচ্ছা সেমাই কিভাবে তৈরী হয় সেটা তো ক্রেতাদের নজরের বাহিরে থাকে। তাই সেমাই উৎপাদনের কারখানা, সেমাই তৈরী পরিবেশ ও গুনগত মান সরকারিভাবেই মনিটরিং করা প্রয়োজন। এতে মানবদেহের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সেমাই কারখানা মালিকদের দাবি তাদের রয়েছে বিএসটিআই লাইসেন্স। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিএসটিআই লাইসেন্স পেল কি ভাবে, এমন প্রশ্ন ভোক্তাদের।
নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা: মুহাম্মদ জামাল উদ্দীন বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী যেসব লাচ্ছা সেমাই আমরা খাচ্ছি, এটা মানবদেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। এই লাচ্ছা সেমাই খেলে আমাদের হার্টে সমস্যা, হার্ট এর্ট্যাক, গ্যাষ্টিক-আলসারসহ এক পর্যায়ে কিডনি সমস্যাও হতে পারে। তিনি বলেন, এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী লাচ্ছা সেমাই গ্রহনে পুরো দেশের মানব স্বাস্থ্যের জন্য এটা হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানান, মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের রয়েছে অলিখিত আঁতাত। ফলে তাদের নীরবতার সুযোগে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি করে বাজারজাত করছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো: কাউছার মিয়া বলেন, প্রায় ওইসব কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেমাই কারখানার মালিকরা সেন্ডিকেট করে ব্যবসা করেন। যার কারণে অভিযানের খবর পেয়ে কারখানা থেকে সরে যান। ওইসব কারখানার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Posted ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১
bbcjournal.com | rifat